Sunday, November 29, 2015

মহররম মাসের ফযীলত ও আমল

বার চান্দের ফযীলত
১২টি চান্দ্র মাসের মধ্যে ৪টি মাস হল অতি পবিত্র ও সম্মানিত মাস। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন পাকে এই চারটি মাসকে আশহুরে হুরুম বলে ঘোষণা করেছেন। সেই মাসগুলি হল মহররম, রজব, যিলক্বদ ও যিলহজ্ব। এই চার মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ও জিঘাংসাবৃত্তি হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই মাসগুলোকে সম্মানিত করে বর্ণনা করেছেন।
মহররম মাসের ফযীলত
মহররম মাস যেমন ফযীলত ও বরকতের মাস তেমনি এই মাসের বুজুর্গীও খুব বেশি। বিশেষ করে এই মাসের ১০
তারিখ দিনটি হলো আশুরার দিন। এই দিনে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবেও। অতএব এই দিন প্রত্যেক মুসলমানদের উচিত ইবাদত-বন্দেগী করা এদিন যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে ঘটবে সংক্ষেপে সেগুলোর বর্ণনা নিচে দেয়া হলোঃ
আশুরা
মহররম মাসের ১০ তারিখ পরম করুণাময় আল্লাহ্ তাআলা লাওহে মাহফুজ এবং যাবতীয় সৃষ্ট জীবের রূহ পয়দা করেছেন। এই দিন আল্লাহ তাআলা পৃথবী এবং ইহার অন্তর্গত নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত (পর্‌বত) ও গাছ-পালা সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনই পৃথিবী লয় পাবে। আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ) কে পয়দা করে তাকেঁ চির সুখের স্থান বেহেশতে দাখেল করেছেন এবং এই দুনিয়াতে নির্বাসন দেওয়ার সারে তিনশ বছর কাঁদার পর এই দিনে তাঁর তওবা কবুল করেছেন। এই আশুরার দিনেই আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস (আঃ) কে মাছের পেট হতে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই দিনে হযরত মূসা (আঃ) তুর পর্‌বতে তৌরাত কিতাব লাভ করেছেন।

মহররম মাসের নফল ইবাদত
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন- যেই ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম রাত্রে (চাঁদ দেখার রাত্রে) দু' দু' রাকাত করে ৮ রাকাত নফল নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার ও সূরা এখলাছ ১০ বার করে পড়বে, আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ বছর তাকে তার ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততিকে সকল প্রকার বালা মছিবত হতে নিরাপদে রাখবেন এবং তাকে স্বীয় সস্তুষ্টির পথে পরিচালিত করবেন আর তার গত বছরের ছোট খাট গুনাহ্‌ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।

হাদীসে আরও বলা হয়েছে যে, যেই ব্যক্তি এই মাসের প্রথম তারিখের দিনে যে কোন সূরা দিয়ে দু'রাকাত নফল নামায আদায় করবে এবং নামায শেষে কঠোর বিশ্বাসের সহিত নিচে উল্লেখিত দোয়াটি পড়বে, তাহলে দয়াময় আল্লাহ তাআলা তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা মোকাররার (নির্ধারিত) করবেন, সে সারা বছর সেই ব্যক্তিকে মরদুদ শয়তানের প্ররোচনা হতে রক্ষা করবার চেষ্টা করবে এবং ইবাদতে সাহায্য করবে দোয়াটি হল এইঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতাল আবার্‌রুল ক্বদীম, ওয়া হা-যিহী সালাতুল জাদীদাহ। ইন্নী আসআলুকা ফী-হাল ইসমাতা মিনাশ শাইত্বনির রজীম, ওয়া আউলিয়া ইশ্‌শাইত্বন। ওয়া মিন শাররিল বাল ইয়া ওয়াল আফাত। ওয়াল আ'ওনা আ'লা হা-জিহিন নাফসিল আম্মরাতি বিচব্ছু-ই ওয়াল ইসতিগালা বিমা ইউক্বাররিবুনী ইলাইকা। ইয়া যাল জ্বালালি ওয়াল ইকরম।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! তুমি চির পূণ্যময়, চিরস্থায়ী ও অপিরিবর্তনশীল। এইটা নতুন বত্সর। তোমার পবিত্র দরবারে আমি কামনা করছি যে, তুমি আমাকে এই বত্সর মরদুদ শয়তান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের প্রলোভন ও প্ররোচনা হতে নিরাপদে রাখিও। আর সমূদয় বালা মুসীবতের অনিষ্টকারিতা হতে রক্ষা করিও। আমার নিজের কু-প্রবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হতে আমাকে সহায়তা করিও। আর যে কাজের মাধ্যমে আমি তোমার দীদার লাভ করতে পারব সেই কাজে আমাকে লিপ্ত রাখিও।

আশুরার দিবাগত রাত্রের নফল ইবাদত ও রোযা
৯ মহররম দিবাগত রাত্রে ৫০ রাকাত সম্ভব হলে আরও অধিক রাকাত নফল নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা একবার এবং সূরা এখলাছ ৩ বার করে পাঠ করে কারবালার শহীদানদের রূহ মোবারকে বিশেষ করে হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর রূহ মোবারকে সওয়াব রেসানী করে দেয়া অতিশয় সওয়াবের কাজ। এই রাত্রে নিদ্রা না যেয়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, তসবীহ্‌-তাহ্‌লীল পড়া, এস্তেগফার দোয়া দরূদ পড়িবার ইঙ্গিত হাদীস শরীফে রয়েছে। কাজেই প্রত্যেক মুসলমান যাদের নবী (সাঃ)-এর পরিবারের প্রতি আন্তরিক মহব্বত আছে তাদের তা আমল করা একান্ত কর্‌তব্য।

আশুরার দিন নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত ফযলীতের  কাজঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
لا اله الا الله العلى الاعلى- لا اله الا الله رب السموات والارض وما بينهما وما تحت الثرى اللهم اجعلنا ممن دعاك فاجبته وامن بك فهديته - و رغب اليك فاعطيته - وتوكل عليك فاكفيته - وقترب منك فادنيته - اللهم امدد بعيشى مدا واجعل لى فى قلوب المؤمنين ودا - اللهم انا نسئلك الايمانا بك والفضل من الرزق - و نسئلك العافية فى الدين والدنيا والاخرة ياذا الجلال والاكرام-
উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহুল আলিয়্যিল আ'লা। লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস্‌ সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়ামা বাইনাহুমা ওয়ামা তাহ্‌তাছ্ ছারা। আল্লাহুম্মাজ্‌ আলনা মিম্মান দাআকা ফাআযাবতাহু ওয়া আমানা বিকা ফাহাদাইতাহু। ওয়া রাগিবা ইলাইকা ফা আ'তাইতাহু ওতা ওয়াক্কাল আলাইকা ফা-আকফাইতাহু। ওয়াকতারাবা মিনকা ফা-আদ নাইতাহু। আল্লাহুম্মা ইমদিদ বি-আইশি মুদ্দান ওযাআল্লী ফী ক্বুলুবিল মু'মিনীনা বুদ্দা। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল ঈমানাম্বিকা ওয়াল ফাদ্‌লা মিনার রিযকি। ওয়া নাস্‌-আলুকাল আ'ফিয়াতা ফিদ্দিনী ওয়াদ্‌ দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি ইয়া যাল জ্বালালি ওয়াল ইকরম।

অর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ তা'আলার নামে শুরু করছি। সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহান আল্লা তা'আলা ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কোন মা'বুদ নাই। হে আল্লাহ্‌! যে সকল প্রার্থনাকারীর দোয়া ও মুনাজাত তুমি কবুল করেছ। আমাকেও তাদের দলে সামিল করে নাও, যাদেরকে তুমি তোমার প্রতি ঈমান আনার ফলে সত্যের সন্ধান দিয়েছ আর তোমার দিকে আকৃষ্ট হওয়ার ফলে যাদেরকে তুমি স্বীয় নেয়ামত দান করেছ এবং তোমার উপর ভরসা করার ফলে যাদেরকে তুমি প্রাচুর্‌যো দান করেছ আর তোমার নৈকট্য লাভ করতে অভিলাষ করার জন্য যাদেরকে তুমি স্বীয় নৈকট্য ও দীদার দান করেছ। হে আল্লাহ্‌! আমার জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে তুমি আমাকে সর্‌বোতভাবে সাহায্য কর আর তোমার মোমীন বান্দাদের অন্তরে আমার জন্য ভালবাসা জন্মায়ে দাও। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার দরবারে পূর্ণ ঈমান, হালাল রিযিক, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। হে রহ্‌মানুর রহীম! তুমি এ বান্দার  প্রার্থনা কবুল কর।
****************